বিশেষ-প্রতিনিধি:
ঢাকার কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে হেরোইন কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এ সময় ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হেরোইনের আনুমানিক দাম ২ কোটি টাকা। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ঘাটারচর এলাকায় গতকাল ২২ আগস্ট-২৩ অভিযানটি পরিচালিত হয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে অভিনব পদ্ধতিতে নামিদামি ব্রান্ডের আটা-ময়দা ও গুড়া মসলার প্যাকেটে হেরোইন প্যাকেজিং কারখানায় অভিযান চালিয়েছে মডেল থানা পুলিশ। হেরোইনসহ ৪ জন ও সরবরাহ করার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটি পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এস আই মো. ইমরানের নেতৃত্ব অভিযান চালিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আটিবাজার ইউসিবি ব্যাংকের সামনে থেকে আটার প্যাকেটের ভেতরে হেরোইন নিয়ে রাজধানীর দিকে যাওয়ার সময় মো. আলী (২৬) ও মো. হাবিবুল ইসলাম রানাকে (৩০) আটক করা হয়।
হেরোইন তৈরির কারখানার খবর পেয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন সাহাব,কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন অর রশীদসহ থানার একটি চৌকস টিম আটককৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে অভিযান চালিয়ে ঘাটারচর আরশিনগর লেক সিটি এলাকার এসডি মহলের ৪র্থ তলায় এবং আটিবাজারের সুজন হাউজিংয়ের একটি বাড়ির নিচতলায় হেরোইন প্যাকেজিংয়ের কারখানা থেকে মো. হেলাল (৪৫), বিপ্লব (২২), মো. বিল্লাল (২২), মো. শরিফুল ইসলামকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন, ব্লেন্ডিং মেশিন, ইলেক্ট্রিক প্যাকিং মেশিন, ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন, বিভিন্ন ব্রান্ডের আটা-ময়দা, হলুদ-মরিচের গুড়ার ১০০০ পিস খালি প্যাকেট ও ৯৮ বান্ডিল ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার শ্রমিক হেলাল জানান, ১৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করেন তিনি। তারা কেবল মালিকের অর্ডারেই হেরোইন তৈরি ও প্যাকেটজাত করতেন। এসব হেরোইন কোথা থেকে আসত বা কোথায় যেত তারা কিছুই জানেন না। তবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই মসলা ও আটার প্যাকেটে হেরোইন ঢুকিয়ে মোড়কজাত করেন তারা। তাদের মালিকের নাম জানিয়েছে টোকাই আরিফ। তাকে কখনো কেউ দেখেনি। তার লোকজন এসে মাল দিয়ে যেত, তৈরি হলে নিয়ে যেত। এসব হেরোইন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। হেরোইনের প্রতিটি পুরিয়া ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো বলে জানান কারখানার অন্য শ্রমিকরা।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম বলেন, শহর থেকে দূরে নিরিবিলি স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এভাবেই হেরোইনের কারখানা বসিয়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা করে আসছিল একটি চক্র। এসব কারখানায় ব্রাউন সুগার বা হেরোইনের নতুন চালান এলে প্রথমে এক প্রকারের কেমিক্যাল মিশিয়ে তাপে গরম করা হয়। এরপর ব্লেন্ডার মেশিনে গুড়ো করে তৈরি করা হয় নতুন আরেক ধরনের নেশাদ্রব্য। পরে তৈরি হওয়া নতুন হেরোইন ছোট ছোট পুরিয়া বানিয়ে সেগুলো বিভিন্ন মসলা ও আটার মোড়কে প্যাকেটজাত করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি একটি চক্র কেরানীগঞ্জের ঘাটার চর ও আটি বাজার এলাকায় হেরোইন তৈরি করে তা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে আসছে। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ করে এদিন সকালে হেরোইন পাচার করার সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরো বলেন, চক্রটি ঢাকা শহরের ৫০ শতাংশ হেরোইনের যোগান দিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীর উঠতি বয়সিদের টার্গেট করেই চক্রটি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। মূলহোতাসহ চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।