নওগাঁয় সংগীত নিকেতনের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল, “নতুন ধানে, নতুন ঘ্রাণে, চলো মাতি পিঠার গানে,” যা পুরো আয়োজনকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
নওগাঁ সংগীত অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তি, সংগীত নিকেতনের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, বাদ্যযন্ত্রশিল্পী এবং অসংখ্য সাংস্কৃতিকপ্রেমীর উপস্থিতিতে উৎসবটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল সংগীত পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী পিঠার প্রদর্শনী এবং বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরার এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
এসময়, নওগাঁ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার চন্দন দেব, রাণীনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার পলাশ চন্দ্র দেবনাথ, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রহমান রায়হান (বাহাদুর), বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি উত্তম কুমার এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সিদ্দিকী (সিটু)। এছাড়া সংগীত নিকেতনের পরিচালক ও সংগীত গুরু অখিল চন্দ্র সহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবে প্রদর্শিত হয় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা। পুলি, পাটিসাপটা, ভাপা, চিতইয়ের পাশাপাশি দুধচিতই, নারিকেল-চিনির পিঠা, ভেজা পিঠা, নকশি পিঠা, ক্ষীর পিঠা এবং তেলের পিঠাও দর্শনার্থীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। সংগীত নিকেতনের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে তৈরি এসব পিঠা উৎসবের মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠে। প্রতিটি পিঠায় যেন ঐতিহ্য এবং শিল্পের নিপুণ ছোঁয়া ছিল।
উৎসবের অন্যতম অংশ ছিল সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা। শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে লোকগানসহ বিভিন্ন ধরণের সংগীত, যা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নৃত্য প্রদর্শনী ও সংগীত পরিবেশনা করা হয়, যা উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। বাদ্যযন্ত্রশিল্পীদের নিখুঁত সুরের মূর্ছনায় পুরো আয়োজন এক অনন্য আবহে পরিণত হয়। উপস্থিত অতিথিরা পিঠা উৎসবের আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আলোচনা সভায়, নওগাঁ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান বলেন, “এই ধরনের উৎসব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি শুধু আমাদের খাদ্য ঐতিহ্যের নয়, বরং শিল্প-সংস্কৃতির একটি সুন্দর উদাহরণ।”
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার চন্দন দেব বলেন, “এই উৎসব নতুন প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে। পিঠার গন্ধ আর সংগীতের ছোঁয়া আমাদের বাঙালিয়ানা জীবন্ত করে তোলে। এ ধরনের আয়োজন আরও বাড়ানোর প্রয়োজন।”
রাণীনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “এই ধরনের আয়োজন শুধু বিনোদন নয়, এটি সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার একটি চমৎকার মাধ্যম। আমি সংগীত নিকেতনের এই উদ্যোগের প্রশংসা জানাই।”
অন্যান্য অতিথিরা বলেন, “নতুন ধান, নতুন পিঠার এ আয়োজন আমাদের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত করে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজেদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিচ্ছি। সংগীত নিকেতনকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। পিঠা উৎসব শুধু খাদ্যের ঐতিহ্য নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং শিল্পের নিদর্শন। এই আয়োজন আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে উজ্জীবিত করে। এই ধরনের আয়োজন আমাদের ঐতিহ্য কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
নওগাঁ সংগীত নিকেতনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই উৎসবের মাধ্যমে একদিকে যেমন বাঙালির লোকজ ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করা হয়েছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।
উৎসব শেষে অতিথি, শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীরা একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনের আশা প্রকাশ করেন। এ ধরনের আয়োজনে নওগাঁর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।