নরসিংদীর বেলাবতে সরকারী হোসেন আলী কলেজের অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন করা হয়।
পলাতক, ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী, রাতের আঁধারে পকেট কমিটি গঠন, স্বেচ্ছাচারী ও অযোগ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করা হয় মানববন্ধনে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৩ সালে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন বীরেশ্বর চক্রবর্তী। যোগদানের পর থেকেই বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎসহ কলেজে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চারবার তদন্ত হয় এবং তদন্তে চারবারই অভিযুক্ত হয় বীরেশ্বর চক্রবর্তী। ২০১৮ সালে অডিট কমিটির অডিটে অধ্যক্ষ বীরেশ্ব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কলেজের প্রায় ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬ শত উনআশি টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হয়। আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে তৎকালীন সময়ে তিন লক্ষ টাকা ফেরত তিনি। উল্লেখিত আর্থিক অনিয়মসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন উক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এদিকে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হঠাৎ করেই উধাও হন অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী। কোনরকম ছুটি ছাড়াই প্রায় ৪ মাস যাবৎ তিনি কলেজে অনুপস্থিত। কলেজের অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীরা বারবার ফোন দিলেও অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
কলেজের শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ডিডিও সীট ও লেনদেনের পাসওয়ার্ড তার কাছে থাকায় বন্ধ রয়েছে কলেজটির যাবতীয় লেনদেন। তাছাড়া ছুটি ছাড়া দীর্ঘ ৪ মাস ধরে অনুপস্থিত থাকার কারণে কলেজটির অফিসিয়াল কাজকর্মের পাশাপাশি পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটছে। ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ চলতি দায়িত্ব দিয়েছেন জিয়ারউর রহমান নামের একজন শিক্ষককে।
সরেজমিনে বেলাব হোসেন আলী কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটির দোতলা ভবনের একটি কক্ষে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত। তদন্ত কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নরসিংদী সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সিরাজ উদ্দীন ভূঁইয়া। নিচে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চলছে শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন।
কলেজের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী কুলসুমসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর তাদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও কলেজে তার একক আধিপত্য ছিল। গত ৪ মাস ধরে কলেজে আসছেন না অধ্যক্ষ। অর্থ আত্মাসৎ ও নানা অনিয়মের কারণে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর পদত্যাগ চান তারা।
বেলাব সরকারী হোসেন আলী সরকারী কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন সময়ে কলেজের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে তিনি ৪ মাস ধরে অনুপস্থিত। উনি কোথায় আছেন, আমরা কিছুই জানি না। আমরা চাই উনাকে যেন অপসারণ করা হয়।
কলেজটির চলতি অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা জিয়ারউর রহমান বলেন, সরকার পতনের পর থেকেই কোনরকম ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী। উনার কাছে ডিডিও সীট ও কলেজের লেনদেনের পাসওয়ার্ড থাকায় আমরা কলেজের কোনরকম লেনদেন করতে পারছি না।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম বলেন, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী অনুপস্থিত থাকায় পাঠদান ও কলেজের অন্যান্য কাজে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে