প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে। এ খবরে মহম্মদপুরের অধিকাংশ ঠিকাদার শহরে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা সদ্য সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় কর্মরত ঠিকাদারগণ এজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এক পর্য়ায়ে শুরু হয় তদন্ত। বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা পড়ে যায় তদন্ত প্রতিবেতন। ফের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ঠিকাদারগণ। এ বিষয়ে পূন: তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৩০ আগষ্ট শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ঠাকুরেরহাট বাজারে শতাধিক ব্যক্তি মানববন্ধন করেছেন। তার এই দুর্নীতির বিষয়ে গত ১৪ আগষ্ঠ উপজেলায় কর্মরত ঠিকাদারগণ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন দপ্তরে নতুন করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। স্বজনপ্রীতি করে ঠিকাদার কে কাজ পাইয়ে দেওয়া, ঠিকাদারের সাথে চুক্তিতে কাজ করা এবং বিল প্রাদানে বাধ্যতামূলক অগ্রিম ঘুষ নেওয়া, গোপনে দরপত্র আহŸান করে নিজের পছন্দ মত ঠিকাদার কে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং ঠিকাদার দিয়ে কাজ কম করিয়ে করে নিজে অন্যের নামে ভূয়া প্রত্যয়ন তৈরি করে সম্পূর্ন বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদরগন এই মানববন্ধন করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিইডির নতুন সিডিউল রেট দেওয়ার পরেও সর্বোচ্চ ৮% উর্ধ্বদরে তার আস্থাভাজন এক ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এডিপির দরপত্র ওটিএম পদ্ধতিতে আহব্বান করেন। প্রতিটি প্যাকেজে তার আস্থাভাজন একজন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন এবং তাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অথচ অধিক স্বচ্ছতার জন্য সারাদেশে এলটিএম পদ্ধতিতেই এডিপি দরপত্র আহŸান করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে তার দপ্তরের কার্যসহকারী নাজমুল হোসেন সাদ্দামের (কুটি সাদ্দাম) স্ত্রীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নাহিয়ান ট্রেডার্স’ কে কাজ পাইয়ে দেন। কিন্তু ওটিএম পদ্ধতিতে নাহিয়ান ট্রেডার্সের দরপত্রে অংশগ্রহণের কোন যোগ্যতায় ছিলনা। একই অর্থবছরে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইন এক সহকারী প্রকৌশলীর আত্মীয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আর এস কর্পোরেশন কে কাজ পাইয়ে দেন। এই প্রতিষ্ঠানেরও ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্রে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ছিলনা বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেবল মাত্র একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করিয়েই কাজ দিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে। এভাবে তিনি নেপথ্যে থেকে ওই ঠিকাদার কে নানাভাবে সহযোগিতা করেন এবং ঠিকাদারের সাথে গোপনে যৌথ ব্যবসা করেন। অন্যদিকে তার আত্মীয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও আর এস কর্পোরেশন কে দিয়ে ২৫৫ মিটার বিএফএস এর স্থলে ২০৪ মিটার কাজ সম্পন্ন করে সমুদয় বিল উত্তোলন করার অভিযোগ করা হয়েছে।
স¤প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী জাইকা প্রকল্পের একটি টেন্ডারে ঝিনাইদহ জেলাধীন এক ঠিকাদার আত্মীয়ের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অবৈধ উপায়ে রেটকোট দিয়ে সহায়তা করে দুইটি কাজ পাইয়ে দেন। কিন্তু জাইকা বরাদ্দকৃত অর্থে গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে ইছামতি বিলের কৃষক ছাউনি এবং ঝামা ফেরি ঘাটে যাত্রী ছাউনির কাজে টাইলস ও বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন না করেই সমুদয় বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগ পত্রে। এছাড়া উপজেলার বাবুখালি ইউনিয়নের ঠাকুরের হাট বাজারে টয়লেট, চান্দিনা ঘর, নহাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল স্থাপন না করেই সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানে বরকত আলীর নামে ভূয়া প্রত্যয়ন তৈরি করে সমুদয় বিল উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মশাখালী, কলাগাছি ও রাজপাট এলাকার বিভিন্নস্থানে ইটের সলিংয়ের কাজ কম করে ঠিকাদারের সাথে সমন্বয় করে সমুদয় বিল উত্তলোন করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তার নামে ভূয়া প্রত্যয়ন দেখে তাৎক্ষণিত প্রকৌশলীর উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন এবং এ অপরাধে তিনি থানায় সাধারন ডায়েরি করেছেন।
চলতি অর্থবছরে উপজেলায় ‘জয় সেন্টার’ নির্মাণে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্তে¡ও তাকে কোনো দায়িত্ব না দিয়ে খালিদ হাসান নামের নতুন একজন সার্ভেয়ারকে দিয়ে কাগজপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেন। মূলত: এ কাজের নেপথ্য ঠিকাদার তিনি নিজেই, এমন গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী-এ কাজটি পেয়েছিলেন ঝিনাইদহ জেলাধীন মিজানুর রহমান নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু স্থানীয় একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে মিজানুর রহমানকে ম্যানেজ করে প্রকৌশলী নিজেই নেপথ্যে থেকে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন। এতে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্বে কোনো নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই পাথর মেশিনে ভেঙ্গে ব্যবহার উপযোগী দেখিয়ে এবং রাতের আধারে সেই পাথরের উপরে কিছু নতুন পাথর ফেলে ব্যবহৃত ও নতুন পাথর মিশিয়ে কলম ঢালায় দিয়েছেন এবং সিডিউলে বর্ণিত এফএম বালু ব্যবহার করা হয়নি। উপজেলা সদরে এ ধরনের নিময় বহির্ভূত কাজ সকলের চোখের সামনেই করা হচ্ছে। নাজমুল হোসেন ওরফে সাদ্দাম নামের একজন কার্যসহকারীকে দিয়ে তিনি এ ধরণের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলেছেন। মধুমতি নদীর উপর শেখ হাসিনা সেতুতে লাইট স্থাপণের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে একটি লাইটও স্থাপন না করে নিজেই সমুদয় টাকা তুলে নেন। এছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে কার্যসহকারী নাজমুল হোসেন সাদ্দামের স্ত্রীর নামের লাইসেন্সে আংশিক কাজ করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন, এবং কিছু প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা উত্তোলনসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী স্থানীয় ঠিকাদারদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রকৌশলী সাদ্দাম হুসাইনের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমানিত হওযায় প্রধান প্রকৌশীলী আক্তার হোসেনের নির্দেশে ২২ সেপ্টেম্বর মাগুরা এলজিইডি,র নির্বাহী প্রকৌশলী আ. ন. ম ওয়াহিদুজ্জামামান স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে সাদ্দাম হুসাইন কে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় তাৎক্ষণিত বদলি করেন। এবং রামপালের প্রকৌশলী গোলজার হোসেন একই দিনে মহম্মদপুর এজিইডিতে যোগদান করেন।
অভিযোগকারী ও স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজমাইন ট্রেডার্সের স্বত্ত¡াধিকারী এস এম শাহরিয়ার শাওন বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন। এ কারনে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে ন্যায় বিচার পেতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। তার বদলিতে আমরা অনেক খুশি। অন্য ঠিকাদার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তার বদলির খবর পেয়ে সাথে সাথে আমরা মিষ্ঠি বিতরণ করেছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বরকত আলী বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আমার নামে ভূয়া প্রত্যয়ন তৈরি করে বিল উত্তলোনের বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি। কেবল তার বদলিতে আমি খুশি নই। তিনি জালিয়াতি করে শাস্তিযোগ অপরাধ করেছেন। উপরিক্ত এলিগেশন এর মধ্য রয়েছে নানান দুর্নীতি ও অনিয়ম, কাজ না করে বিল উত্তোলন, কাজ কম করে সম্পূর্ন বীল উত্তোলন, স্কুলের গ্রেড ভিম এ ২০মিলি রডের পরিবর্তে ১৬ মিলি ব্যবহার, ডাবল জালির পরিবর্তে সি্েঙ্গলজালি দিয়ে বেজ ঢালাই,বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলের কাজে অনিয়ম, রাস্তায় ৬ইঞ্চি ঢলাইয়ের পরিবর্তে ২.৫ইঞ্চি ঢালাই, পরিষদের রাস্তায় পাথরের পরিবর্তে কোয়া দিয়ে ঢলাই।এসব অনিয়ম ও দুর্নিতির জন্য স্থানিয় জনগণ এর মধ্য একটি উদ্বেগ কাজ করছে তার দুর্নীতির পূর্ন তদন্তসহ তার শাস্তি দাবি জানাই