মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসায় হাতে-পায়ে শেকল দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে জড়িত এক নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোসাঃ সালমা ঝুমুর, সান, রকি ও হিমেল। আর এই ঘটনার পিছনে মাসুদ নামের একজন ব্যারিস্টার রয়েছেন বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ রাত এগারটায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নং রোডের একটি বাসা থেকে হাত ও পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় ২৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে উদ্ধার করে ও প্রয়োজনীয় আলামত জব্দ করে। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের বিস্তারিত কথা শুনে ও তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলা রুজু হয়।
ভিকটিমকে পাশবিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও পর্ণ ভিডিও ধারণের মতে গুরুতর অপরাধের ঘটনায় সংবাদ প্রাপ্তির পর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে মামলাটির তদন্ত শুরু করে। ভিকটিমের বক্তব্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত আসামী মোসাঃ সালমা ঝুমুরকে নবীনগর হাউজিং এলাকা, আসামী সানকে টিক্কাপাড়া এলাকা, আসামী রকিকে পল্লবী এলাকা ও আসামী হিমেলকে হাজারীবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের নিকট থেকে তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
ভিকটিমের জবানবন্দি ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিমের দুলাভাই এর মাধ্যমে জনৈক ব্যারিস্টার মাসুদের সাথে আনুমানিক ২০১৭ সালে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদ ভিকটিমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বাসা ও মেসে রাখে। ব্যারিস্টার মাসুদ ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভাড়া বাসা ও বিভিন্ন হোটেলে ভিকটিমকে ধর্ষণ করত। ব্যারিস্টার মাসুদ ভিকটিমের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতো। গত বছরের নভেম্বর মাসে ভিকটিম ব্যারিস্টার মাসুদের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং ৩ নং রোডের একটি বাসায় ওঠে। ভিকটিমকে দেখাশুনার জন্য সালমাকে ব্যারিস্টার মাসুদ নিয়োগ করে। সালমা ও ভিকটিম এক মাস উক্ত বাসায় থাকার পর তারা ঘটনাস্থল নবীনগর হাউজিং ১৬ নং রোডের বাসায় উঠে। সালমা ও ভিকটিম একত্রে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সালমা ভিকটিমকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গেলে হিমেল ও সানের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে ভিকটিম, সালমা, হিমেল ও সান ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতো। একপর্যায়ে সানের সাথে ভিকটিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করতো। সানের সাথে ভিকটিমের সম্পর্কের বিষয়টি সালমা ব্যারিস্টার মাসুদকে জানায়। ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয় এবং ভিকটিমকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। ব্যারিস্টার মাসুদ সালমাকে ভিকটিমকে আটক করে পর্ণ ভিডিও ধারণ করতে বলে। ব্যারিস্টার মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভিকটিমকে আটক ও পর্ণ ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সাথে শেয়ার করে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের বাসায় সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। উক্ত ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ধারণ করে। পরবর্তীতে সান আরও একাধিকবার ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামীরা ভিকটিমের বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দিবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। ভিকটিম চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে তার হাত পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভিকটিমকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয় ও ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ঐদিন বিকেলে আসামীরা ভিকটিমের হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে শেকল রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সাথে আটকে রাখে। গত ৭ মার্চ রাতে রকি ভিকটিমকে ধর্ষণ করে।
আসামীরা ভিকটিমের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। তারা শুধু খাওয়ার সময় ভিকটিমের হাতের শেকল খুলে দিতো। গত ৮ মার্চ আসামীরা ভিকটিমকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায় ও সে অনুযায়ী ভিকটিমকে কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভিকটিমকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মত করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণকৃত ভিডিও আসামী সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের নিকট প্রেরণ করে। ভিকটিমের সাথে আসামী হিমেল, রকি ও সানের পর্ণ ভিডিও সালমার মোবাইলে ধারণ করা হয়। ভিকটিমের সাথে আসামী সালমা ও সানের পর্ণ ভিডিও হিমেলের মোবাইলে ধারণ করা হয়। রকির মোবাইলেও পর্ণ ভিডিও ধারণ করা হয়। আসামীরা ভিকটিমের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরন করে।
গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় আসামী সালমা ভিকটিমকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত এগারটার দিকে ভিকটিমের ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে ভিকটিম জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। ভিকটিমের চিৎকারে অজ্ঞাতনামা পথচারী জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেয় এবং মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ এসে ভিকটিমকে উদ্ধার করে। ভিকটিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসিতে চিকিৎসাধীন। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত মোসাঃ সালমা ঝুমুর, সান, রকি ও হিমেল প্রত্যেকে তিন দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।