ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ সোলায়মান ওরফে তৌহিদ, মোঃ খোকন, হোয়াইট ডেভিল নামে পরিচিত শেখ সেজান ও মোঃ নাসির উদ্দিন। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন, ৪টি সিম কার্ড ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা ও নড়াইলে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ইন্টারনেট রেফারেল টিম।
সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরানুর ইসলাম ডিএমপি নিউজকে জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আদলে ওয়েবসাইট তৈরি করে নকল ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ সৃজন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
তিনি আরো জানান, মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায় প্রতারকরা সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে ওয়েবসাইট নিবন্ধন করেছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর গত ১১ ফ্রেব্রুয়ারি সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও হবিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ সোলায়মান ও মোঃ খোকনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও ৪টি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরানুর ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত সোলায়মান ও খোকনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি নড়াইলের লোহাগড়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হোয়াইট ডেভিল নামে পরিচিত শেখ সেজানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি কুমিল্লার হোমনা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, তৌহিদ ও খোকন সিলেটে একটি ভিসা প্রসেসিং সেন্টারে একসাথে কাজ করতো। করানোর সময় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভুয়া করোনা সনদ প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতো। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সহজে টাকা আয় করতে তারা অনলাইনে প্রতারণার উপায় খুঁজে বের করে। তারা দুজনেই যে কোন ওয়েবসাইটের হুবহু তৈরি করতে পারে। এরই মধ্যে তাদের সাথে পরিচয় হয় আরো দুই সাইবার প্রতারক শেখ সেজান ও নাসির উদ্দিনের। এই দুইজন বিভিন্ন থানায় জন্মসনদ জালিয়াতি ও এনআইডি তথ্য ফাঁস করার একাধিক মামলায় গ্রেফতার হয়। এরপর জামিনে বের হয়ে তৌহিদ ও খোকনকে সাথে নিয়ে তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র তৈরি করে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরানুর ইসলাম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে এনআইডি কপি প্রদান, ভুয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদ তৈরি, মোবাইল বায়োমেট্রিক তথ্য, জাল করোনা সার্টিফিকেট, ভুয়া জন্মসনদ তৈরি, জন্ম সনদের তথ্য প্রদান ও ভুয়া টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে তারা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
তাদের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।